সাম্প্রতিক পোষ্ট

রজব মাস এবং শবে মেরাজের ফজিলত ও আমল নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা

 ⭕ বাঙালীর ঐতিহাসিক শবে মেরাজ। এই শবে মেরাজ উপলক্ষে আমাদের সমাজে রজব মাস এবং শবে মেরাজের ফজিলত ও আমল নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে অনেক কাঁদা ছোড়া ছুড়ি হয়ে থাকে। তাই বিষয়টা উম্মতের সামনে খোলাসা হওয়ার প্রয়োজন মনে করছি। তাই আকাবির ও আসলাফের তাহকিকের আলোকে এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা পেশ করছি ইন শা আল্লাহ।


১.“জান্নাতে রজব নামে একটি নদী আছে। যার পানি দুধের মত সাদা। যে ব্যক্তি রজব মাসে রোজা রাখবে আল্লাহ পাক তাকে কেয়ামতের দিন ওই নদীর পানি পান করাবেন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবেন।” [সুত্র- মকছুদুল মোমেনিন- ২৪১, রাহমানিয়া লাইব্রেরী]


এই রেওয়ায়েতটি সম্পুর্নরূপে ভিত্তিহীন তথা জাল।

[সূত্র- আল ইলালুল মুতানাহিয়া-২/৫৫৫ মিযানুল ই'তিদাল-৪/১৭৩ লিসানুল মিযান-৮/১৭০]


২. “যে ব্যক্তি রজবের সাতাশ তারিখে রোজা রাখবে আল্লাহ পাক তার আমল নামায় ষাট মাস রোজা রাখার সওয়াব লিখে দিবেন।” সুত্র- খোতবাতুল আহকাম-১৪৮ 


এই হদিসটি কোন সুত্রেই প্রমানিত নয়। [আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া-৭/৬৮০-৬৮১,১১/৭৪ তাবয়ীনুল আযাব ৩২,৪২-৪৫ জুযউ ইবনে আসাকির ৩১৬ শুয়াবুল ঈমান ৩/৩৭৩]


৩. এছাড়া মশহুর আছে যে, “পনের রজব রাতে যে চৌদ্দ রাকাত নামাজ পড়বে। প্রতি রাকাতে একবার সুরা ফাতেহা এগারবার সুরা ইখলাস তিনবার সুরা নাস পাঠ করবে, এরপর সুবহা-নাল্ল-হ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্ল-হু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্ল-হ,ত্রিশবার করে পড়ে । আল্লাহ তায়ালা তাঁর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তার জন্য আকাশ থেকে.........।


এই বর্ননাটিও জাল। আল্লামা ইবনুল জাওযী, জালালুদ্দিন সুয়ুতী, ইবনে ওয়াররাক কিনানী, মুহাম্মাদ বিন আলি আশ শাওকানী, আব্দুল হাই লাখনূভী রহ. প্রমুখ একে জাল বলেছেন। [কিতাবুল মউযুআত ৪৩৮-৪৩৯]


🔲 মোটকথা, রজব মাসের নির্দিষ্ট কোন নামাজ কিংবা রোজা নেই। এমাসে নির্দিষ্ট কোন দিনে নফল নামাজ কিংবা রোজা পালনের বিশেষ কোন ফযিলতের কথা নির্ভরযোগ্য কোন হাদিসের দ্বারা প্রমানিত নয়।


⭕ অষ্টম শতকের বিখ্যাত হাদিস বিশারদ আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী রহ. বলেন, “রজব মাসে নির্দিষ্ট কোন আমলের কথা কুরআন হাদীসে বর্ণিত নেই।” তিনি আরও বলেন, “রাসূল ﷺ কিংবা সাহাবায়ে কেরাম থেকে নির্দিষ্ট ভাবে রজব মাসে রোজা রাখার ব্যাপারে কোন ফজিলতের কথা বর্ণিত হয় নি।” [সুত্র- লাত্বায়েফুল মাআরেফ - ২২৮]


🔸 আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন “রজব মাসের ফজিলত, রজব মাসে রোজা রাখার ফজিলত, রজব মাসে নির্দিষ্ট কোন রাতে ইবাদত করার ফজিলত সম্পর্কে প্রমান হওয়ার উপযুক্ত কোন হাদিস নেই।” 

[সূত্র - তাবয়ীনুল আযাব ১১, ফতহুল মুলহিম ৫/৩০৬-৩০৭]


৪. সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ২৭ শে রজবে ইসরা ও মেরাজ সংঘটিত হওয়ার কথাটাই ভিত্তিহীন। এর কোনও প্রামানিক ভিত্তি নেই। একটি ঐতিহাসিক বর্ননার আলোকে কথাটি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। কিন্তু তা আদৌ নির্ভরযোগ্য নয়। আল্লামা ইবনু কাসির, হাফেজ ইবনে রজব হাম্বলী, ইবনে নাসিরুদ্দিন দিমাশকি র. এর মত হাদিস বিশারদগন একে ভিত্তিহিন সাব্যস্ত করেছেন। তৃতীয় শতকের বিখ্যাত ইমাম শাইখ ইবরাহীম হারাবী রহ. ২৭ শে রজব মেরাজ হওয়ার বিষয়কে সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন বলেছেন।


[সূত্র- আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ লিল ইমাম কাস্তালানী-৩/১৪ শরহুল মাওয়াহিব-৮/১৭-১৯ ইসলাহি খুতুবাত লি ত্বাকী উসমানী-১/৪৮-৫৫]


🔲 মোট কথা, মেরাজের দিন তারিখ সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ, ঐতিহাসিক কারও থেকেই নির্ভরযোগ্য কোন বর্ননা পাওয়া যায় না। তাই এ বিষয়ে চুপ থাকাই শ্রেয়। 


কেননা, রাসূল ﷺ বলেছেন,“যা শোনা (যাচাই বাছাই করে নিশ্চিত হওয়া ছাড়া) তাই বলা মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।” [সহীহ মুসলিম- পৃষ্ঠা নং ০৮]


⭕ সর্বোপুরি কথা হচ্ছে, ২৭ তারিখে শবে মেরাজ হিসেবে কোন ইবাদতে লিপ্ত হওয়া বিদ'আত ও গুনাহের কাজ। ২৭ তারিখে মেরাজ সংগঠিত হওয়াটাই ঐতিহাসিক ভাবে প্রমানিত নয়। এছাড়া শবে মেরাজ উপলক্ষে কোন বিশেষ ধরনের আমল কিংবা এই রাতে নির্দিষ্ট করে কোন আমলের  ফজিলত কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমানিত নয়।


🔲 মহান আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার তাওফীক দান করুন এবং বিদআত মুক্ত সুন্নাহ সম্মত জীবন যাপন করার তাওফীক দান করুন, আমিন।

No comments