সাম্প্রতিক পোষ্ট

কুরআন মজিদের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ আয়াত সমূহ

 

কুরআন মজিদের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ আয়াত সমূহ

  • আয়াতুল কুরসি
  • সূরা ইখলাস
  • সূরা ফালাক
  • সূরা নাস
  • সূরা আল-কদর
  • সূরা আল-বাকারার শেষ দুই আয়াত
  • সূরা তাওবা-র প্রথম আয়াত
  • সূরা আলে-ইমরানের শেষ আয়াত
  • সূরা ফাতির-এর শেষ আয়াত

এই আয়াতগুলোর প্রত্যেকটিরই বিশাল ফজিলত রয়েছে। এগুলো পাঠে বা আমলে আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত লাভ করা যায়।

আয়াতুল কুরসি  হলো কুরআন মজিদের সবচেয়ে ফজিলত পূর্ণ আয়াত। এ আয়াতটিতে মহাবিশ্বের ওপর আল্লাহর ক্ষমতার কথা বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু জর জুনদুব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "আয়াতুল কুরসি কুরআনের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন আয়াত। যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকে না।"

সূরা ইখলাস  হলো কুরআন মজিদের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সূরা। এ সূরায় আল্লাহর একত্ববাদের কথা বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার সূরা ইখলাস পড়বে,তার জন্য তার দাসত্ব মুক্ত হয়ে যাবে।"

সূরা ফালাক এবং সূরা নাস হলো দুটি ছোট্ট সূরা। এ সূরায় দুষ্ট শয়তান ও তার কুমন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচার জন্য দু'আ করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর আগে সূরা ফালাক ও সূরা নাস তিনবার পড়বে, তাকে কোনো মন্দ কিছু স্পর্শ করবে না।"

এছাড়াও, কুরআন মজিদের অন্যান্য আয়াতগুলোরও বিভিন্ন ফজিলত রয়েছে। যেমন, সূরা আল-কদর-এর আমলে লাইলাতুল কদরের ফজিলত লাভ করা যায়। সূরা আল-বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠে শয়তানের অনিষ্ট থেকে বাঁচা যায়। সূরা তাওবা-র প্রথম আয়াত পাঠে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ করা যায়। সূরা আলে-ইমরানের শেষ আয়াত পাঠে আল্লাহর সাহায্য লাভ করা যায়। সূরা ফাতির-এর শেষ আয়াত পাঠে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়।

 

(১) সূরা ফাতিহা: সকল রোগের ঔষধ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা সফরে চলছিলাম। (পথিমধ্যে) অবতরণ করলাম (এক স্থানে)। তখন এক বালিকা এসে বলল, ‘এখানকার গোত্রের সরদারকে সাপে কেটেছে। আমাদের পুরুষগণ বাড়িতে নেই। আপনাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছেন যিনি ঝাড়-ফুঁক করতে পারেন?’ তখন আমাদের মধ্য থেকে একজন ঐ বালিকার সঙ্গে গেল। আমরা জানতাম না সে ঝাড়-ফুঁক জানে। ওখানে গিয়ে সে ঝাড়-ফুঁক করল এবং গোত্রের সরদার সুস্থ হয়ে উঠল। এতে সর্দার খুশী হয়ে তাকে ত্রিশটি বকরী দান করেন এবং আমাদের সকলকে দুধ পান করান। ফিরে আসার পথে আমারা জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি ভালভাবে ঝাড়-ফুঁক করতে জানো? (অথবা রাবীর সন্দেহ) তুমি কি আদৌ ঝাড়-ফুঁক করতে পারো?’ সে বলল, ‘না, আমি তো কেবল উম্মুল কিতাবসূরা ফাতিহাদিয়েই ঝাড়-ফুঁক করেছি। আমরা তখন বললাম, ‘যতক্ষণ না আমরা নবীজি (ﷺ)-এর কাছে পৌঁছে তাঁকে জিজ্ঞেস করি ততক্ষণ কেউ কিছু বলবে না। এরপর আমরা মদিনায় পৌঁছে নবীজি (ﷺ)-এর কাছে ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন, ‘সে কেমন করে জানলো তা (সূরা ফাতিহা) আরোগ্যের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে? তোমরা নিজেদের মধ্যে এগুলো বণ্টন করে নাও এবং আমার জন্যও এক ভাগ রেখো। [বুখারী (৫০০৭), মুসলিম (২২০১)]

.

(২) সূরা বাকারা: জীন শয়তানের অনিষ্ঠ থেকে রক্ষার হাতিয়ার

নবীজি (ﷺ) বলেন, ‘তোমাদের ঘরসমূহকে কবর সদৃশ করে রেখো না (অর্থাৎ নফল সালাতসমূহ বাড়ীতে আদায় করবে)। কারণ, যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয় শয়তান সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়। [সহীহ মুসলিম (১৭০৯)]

 

নবীজি আরও বলেন, ‘কেউ যদি রাতে সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট। [বুখারী (৫০০৯)]

.

(৩) সূরা আলে ইমরান: কিয়ামতের দিন মেঘ খণ্ড হয়ে আসবে

নাও্ওয়াস ইবনু সামআন (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, আমি নবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি কিয়ামতের দিন কুরআন ও কুরআন অনুযায়ী যারা আমল করত তাদেরকে আনা হবে। সূরা বাকারা এবং সুরা আলে ইমরান অগ্রভাগে থাকবে। রাসূলুল্লাহ সূরা দুটি সম্পর্কে তিনটি উদাহরণ দিয়েছিলেন যা আমি কখনো ভুলিনি। তিনি বলেছিলেন, এ সূরা দুটি দু খণ্ড ছায়াদানকারী মেঘের আকারে অথবা দুটি কালো চাদরের মত ছায়াদানকারী হিসেবে আসবে, যার মধ্যখানে আলোর ঝলকানি অথবা সারিবদ্ধ দু ঝাঁক পাখীর আকারে আসবে এবং পাঠকারীদের পক্ষ নিয়ে যুক্তি দিতে থাকবে। [মুসলিম (১৭৬১)]

.

(৪) যে সূরাগুলো নবীজিকে সবচেয়ে ভয় পাইয়ে দিয়েছিল

নবীজি (ﷺ) বলেন, ‘সূরা হুদ, ওয়াকিয়া, মুরসালাত, নাবা এবং সূরা তাকভীর আমাকে বৃদ্ধ বানিয়ে দিয়েছে। [তিরমিযী (৩২৯৭) সহীহ]

.

(৫) সূরা বনী ইসরাইল এবং সূরা যুমার: নবীজির রাতের আমল

আয়েশা (রাযি.) বলেন, ‘নবীজি (ﷺ) সূরা যুমার এবং সূরা বনী ইসরাইল না পড়ে ঘুমাতেন না। [তিরমিযী, সিলসিলাহ সাহিহা (৬৪১), আলবানী]

.

(৬) সূরা কাহাফ: দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তি

নবীজি (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত (আরেক বর্ণনা অনুযায়ী শেষ দশ আয়াত) মুখস্থ করবে, তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা করা হবে। [সিলসিলাহ সাহিহা (৫৮২), আলবানী]

 

আরেক হাদীসে বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়বে, তার জন্য পরবর্তী জুমা পর্যন্ত নূর চমকাবে [সিলসিলাহ সাহিহা (৭৩৬), আলবানী]

.

(৭) সূরা মুলক্: ক্ষমা লাভের সূরা

নবীজি বলেন, ‘কুরআনে ৩০ আয়াতের একটি সূরা রয়েছে, এটি ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে। ফলে তাকে মাফ করে দেয়া হবে। আর সেই সূরাটি হলো সূরা মুলক্। [তিরমিযী, সহীহ: আলবানী (২৩১৫)]

.

(৮) সূরা ওয়াকিয়া: ধনাঢ্যতা লাভের উপায়

যে ব্যক্তি সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করে, শেখা, তার নাম গাফেলদের তালিকায় লেখা হবে না, সে এবং তার পরিবার দরিদ্রতায় জর্জরিত হবে না। [সিলসিলা আহাদিস দ্বয়িফাহ (২৯১)]

.

(৯) সূরা হাশর: জান্নাত লাভের মাধ্যম

যে ব্যক্তি দিনে অথবা রাতে সূরা হাশরের শেষ আয়াত পড়বে, সে যদি সেদিন অথবা সে রাতে মৃত্যুবরণ করে, তার জন্য জান্নাত আবশ্যক। [(যইফ), যইফ আল-জামি আস-সাগীর (৫৭৭০)]

.

(১০) মুক্তি সোপান: সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস

আবদুল্লাহ ইবন খুবায়ব তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক বর্ষণমুখর রাতে গভীর অন্ধকারে আমাদের জন্য দুআ করার উদ্দেশ্যে আমারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তালাশ করতে বের হলাম। এক স্থানে গিয়ে আমি তাঁকে পেলাম। তখন তিনি বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বললেন, বলো। আমি কিছুই বললাম না। পুনরায় আমাকে বললেন, বলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী বলব? তিনি বললেন, “সকাল-সন্ধ্যায় কুল হুয়াল্লাহু আহাদ (সূরা ইখলাস) এবং মুআওওয়াযাতাইন (সূরা ফালাক, নাস) তিন বার পাঠ করবে; তবে তা সব কিছুর ক্ষেত্রে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। [তিরমিযী (৩৫৭৫) সনদ: হাসান]

No comments